দাঁতে শিরশির করে ব্যাথা মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ
দাঁতের শির শির ব্যথা সাধারণত দাঁতের সংবেদনশীলতার কারণে হয়। এটি একটি খুব সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হলো:
১. দাঁতের এনামেলের ক্ষয়:
দাঁতের বাইরের এনামেল স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হলে অভ্যন্তরীণ ডেন্টিন স্তর প্রকাশিত হয়, যা ঠাণ্ডা, গরম, মিষ্টি বা টক খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
২. গাম বা মাড়ির সংকোচন:
বয়স বাড়ার সাথে বা ভুল ব্রাশ করার ফলে মাড়ি সংকুচিত হয়ে দাঁতের রুট অংশ প্রকাশিত হতে পারে। এই অংশ সংবেদনশীল হওয়ার কারণে শির শির ব্যথা অনুভূত হয়।
৩. দাঁতের ক্ষয় :
৪. দাঁত পরিষ্কার করার সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ:
অতিরিক্ত শক্ত ব্রাশ করা বা ভুল টেকনিক ব্যবহার করলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সংবেদনশীলতা বাড়ে।
৫. দাঁত বাঁধা বা ক্লেঞ্চ করা:
দাঁত বাঁধা বা দাঁতে চাপ দেওয়ার ফলে এনামেল ক্ষয় হতে পারে।
৬. ডেন্টাল ট্রিটমেন্টের পরবর্তী সমস্যারুট:
ক্যানাল, ফিলিং বা স্কেলিং করার পর সাময়িক সংবেদনশীলতা হতে পারে।
৭. গভীর দাঁত ক্ষয় বা সংক্রমণ:
দাঁতের শিকড়ের সংক্রমণ বা দাঁতের অভ্যন্তরে পুঁজ জমা হলে শির শির ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
প্রতিকার:
ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করুন যা সংবেদনশীলতা কমায়। নরম ব্রাশ ব্যবহার করে সঠিক টেকনিক অনুসরণ করুন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে চেকআপ করুন। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী রুট ক্যানাল বা অন্যান্য ট্রিটমেন্ট নিন।
দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ:
১. মাড়ির প্রদাহ (Gingivitis)
এটি মাড়ির একটি সাধারণ প্রদাহজনিত সমস্যা। দাঁতের প্লাক ও টারটার জমার ফলে মাড়ি ফুলে যায় এবং রক্তপাত হতে পারে।
২. পিরিওডোনটাইটিস (Periodontitis)
যদি জিনজিভাইটিস চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি পিরিওডোনটাইটিসে রূপ নিতে পারে। এটি মাড়ির গভীর প্রদাহ এবং দাঁতের আশেপাশের হাড় ও টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৩. খাদ্য কণা আটকে যাওয়া:
দাঁতের ফাঁকে বা মাড়ির নিচে খাদ্য কণা আটকে গেলে সংক্রমণ ও ফোলা সৃষ্টি হতে পারে।
৪. হরমোনের পরিবর্তন:
গর্ভাবস্থা, পিউবার্টি, ঋতুচক্র, বা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মাড়ি ফুলে যেতে পারে।
৫. ভিটামিনের অভাব (বিশেষত ভিটামিন C)
স্কার্ভি বা ভিটামিন C-এর অভাবে মাড়ি দুর্বল ও ফুলে যেতে পারে।
৬. ইনফেকশন:
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ মাড়িতে প্রদাহ ও ফোলা সৃষ্টি করতে পারে।
উদাহরণ: হারপিস বা ক্যানডিডা ইনফেকশন।
৭. মাড়ির আঘাত বা ক্ষত:
শক্ত খাবার চিবানো, দাঁতে আঘাত, বা দাঁতের চিকিৎসার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে মাড়ি ফুলে যেতে পারে।
৮. ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার:
ধূমপান বা তামাকের কারণে মাড়ির রক্ত সঞ্চালন কমে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
৯. অ্যালার্জি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
কিছু ওষুধ যেমন ফেনিটয়েন, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার বা ইমিউনোসপ্রেসেন্ট মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
১০. অপরিষ্কার মুখগহ্বর:
সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়া জমে মাড়ি সংক্রমিত হতে পারে। মাড়ি ফোলার প্রতিকার ও প্রতিরোধ দাঁতের সঠিক যত্ন নিন।
প্রতিদিন দু’বার নরম ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করুন। ফ্লস ব্যবহার করুন। মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার রাখুন। খাদ্যাভ্যাস উন্নত করুন, ভিটামিন C ও ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার খান ডেন্টিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
যদি মাড়ি ফুলে থাকে, দাঁতের ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক চিকিৎসা নিন। ধূমপান এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করুন,বছরে অন্তত দুইবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে যান। যদি মাড়ির ফোলা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ব্যথা খুব বেশি হয়, তবে এটি উপেক্ষা না করে দ্রুত ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।